Wednesday, December 25, 2019

শুভ বড়দিন; রয়ের বাড়ি ফেরা

বন্ধুরা, আমি দশ বছর ব্লগিং করে আসছি এ কথা সকলেই জানেন। প্রথমদিকে আমি এবং অন্যান্য সব ব্লগাররা শুধুমাত্র ব্লগেই পোস্ট করতাম। দর্শকরা নিয়মিত ব্লগে এসে ঘুরে যেতেন। এখন সময়, মাধ্যম, এবং সর্বোপরি আমি নিজে- সবটাই অনেক পাল্টে গেছে। তাই এখন ব্লগ থাক বা না থাক, সবাই এখন "ফেসবুক"-এ অনেক বেশি সময় কাটান(অন্য মাধ্যমের চেয়ে), এবং তারা মূলত কমিক্সের ডাউনলোড লিংক নামাতেই ব্যস্ত থাকেন। মন্তব্য ব্লগে পাওয়া যায় না(সেটা নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও সেটাই বাস্তব আমি জানি) বা পেলেও সাধারণত তা কম। আবার কিছু বিশেষ পোস্টে ২০-২২ বা ৩০-৪০টি মন্তব্যও পাওয়া গেছে। বর্তমানে বাংলা কমিক্সের সবচেয়ে পুরোনো সক্রিয় ব্লগারদের মধ্যে আমার পরেই আছে ইন্দ্রনাথদা(৫ বছর হয়ে গেলো!,যদিও ইন্দ্রদা আমার চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় )

এই দশ বছরে শুধু ব্লগ কেন, কমিক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত রকম কাজ(ডিজিটাইজেশন বা ডকুমেন্টেশন বা অনুবাদ) থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবো ভেবেছি। এবং তা শুধু একবার নয়, বহুবার। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক আছে, সব বলে বা লিখে বোঝাতে পারবো না।

আমি এবং আমার যে সকল বন্ধুরা, যারা নিঃস্বার্থে, শুধুমাত্র পাগলের মতন কমিক্স ভালোবাসি(অবশ্য আমাদের চেয়েও বেশি পাগল আছেন), আমরা সবাই একসূত্রে বাঁধা... সেটি হল শুধু পড়তে নয়, আমরা আপনাদের কমিক্স পড়াতে ভালোবাসি। পুরোনো কমিক্স সংরক্ষণের পাশাপাশি সেটিকে স্ক্যান করে বিনামূল্যে পড়তে দিই। এছাড়া আমার কিছু বন্ধু যেমন চিত্রচোর, পার্থ অরণ্যদেব, এবং(ebongcomics দেবাশীষ),ইন্দ্রনীলদা অনেক সময় খরচ করে শুধুমাত্র আমার/আপনাদের মতন পাঠকের জন্য বিনামূল্যে বিদেশী কমিক্স অনুবাদ করে যাচ্ছে নিয়মিত। এতো পরিশ্রমের বদলে আমরা কি একটু সামান্য মন্তব্যও আশা করতে পারি না? আমি বলছি না আপনারা শুধু "ভালো" বা ধন্যবাদ এগুলোই লিখুন... অনুবাদ ভালো বা খারাপ যাই লাগুক সেগুলো যদি জানান তাতে নতুন ব্লগাররা উৎসাহ পাবে।

অনেক ব্লগারদের ব্লগিং ছেড়ে দেওয়ার একটি অন্যতম কারণ, তারা কিছু সময় পরে এটি ভাবতে বাধ্য হন... "এসব করে কি হবে"? হ্যা, এটি শুধুমাত্র তাদের পরিবারের লোকেদের কথা নয়, তাদের নিজের কথাও। ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়িয়ে কি লাভ? এক্ষেত্রে আমি এবং আমার সেইসব বন্ধুরা ব্যতিক্রমী, আমরা বনের মোষকে তাড়াতেই ভালোবাসি! আমাদের সংখ্যা খুবই কম! তাও তাড়া করি।

কিন্তু বর্তমানে আমি এবং আমার সব বন্ধুদের একটি ভূতে তাড়া করেছে। আর সেটি হল শেয়ারিং এর ভূত! হ্যা, আমাদের কমিক্স যে কেউ শেয়ার করতে পারেন, এবং বিশেষ করে বর্তমান যুগে ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে তা কয়েক সেকেন্ডে অসংখ্য লোকের কাছে পৌঁছে যায়। আমাদের কারোর তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু খারাপ লাগে যখন আমাদের স্ক্যান বা অনুবাদ কোনো পাঠক কোনোরকম কৃতজ্ঞতা না জানিয়েই সেটি বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করেন। কোথায় তারা সেটি পেলেন তা বলার প্রয়োজনবোধটুকুও করেন না অনেকেই। আবার কেউ কেউ না জেনেও শেয়ার করেন। তাই তিনি যদি সত্যি না জানেন, তাহলে অন্ততপক্ষে মূল আপলোডারকে ক্রেডিট দেওয়া উচিত।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কিছু গ্ৰুপে নতুন কমিক্স যেগুলি খুবই কম দামে পাওয়া যায়, সেগুলিও কেউ কেউ আপলোড করে দিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে প্রকাশক এবং শিল্পী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন যুগ পাল্টেছে, অনেকে হাতে পড়ার চাইতে পিডিএফ চান। বা হাতে নিয়ে পড়া সম্ভব নয়, কারণ তিনি বাইরে থাকেন। আবার কেউ বা খরচ করতে চান না।

এই কারণে প্রথম থেকে ইন্দ্রনাথদা তার ব্লগে জলছাপ ব্যবহার করে আসছে। আমিও শুরুর দিকে করতাম। কিন্তু বরাবর দেখেছি জলছাপ দিলে অনেক পাঠকই তা অপছন্দ করেন। তাই দেওয়া বন্ধ করে দিই। কিন্তু মাস দুয়েক আগে "অকবির পাঠশালা" নামক(ফেক নাম বোঝাই যায়) ইন্দ্রনাথদার  সমস্ত ফ্যান্টমগুলিকে আলাদা করে নিজস্ব ফাইল বানিয়ে সেগুলিকে "ফ্যান্টম- ১ম খন্ড" বলে ফেসবুক একটি গ্রুপে চালিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়োচ্ছিলো। পাঠকরা ইন্দ্রনাথদার জলছাপ আছে দেখেও তাকেই সমস্ত রকম ক্রেডিট দিতে থাকে। একবারও কেউ জিগেস করলেন না যে ফাইলগুলি উনি কথা থেকে পেলেন? এরকম জলছাপ কেন? পাঠকদের এরূপ সুবিধেবাদী ব্যবহার দেখে আমার মতন প্রত্যেক ব্লগারের সত্যি সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। শুধু অকবির নন, এরকম আরও অনেকে আছেন.. এদের মধ্যে কেউ কেউ না বুঝে শেয়ার করেছেন, আর আমার তো কোনো কমিক্সেই জলছাপ থাকে না। বরং আমি যদি বলি যে বহু বছর ধরে চলা রোভার্সের রয় এবং বিলির বুট দুটি কমিক্সই সম্পূর্ণ আমার আপলোড করা, লোকে উল্টে আমাকেই জিগেস করবেন কি প্রমাণ আছে? কিন্তু ইন্দ্রনাথদার তো আছে। অন্যান্য ব্লগ থেকেও এভাবে শেয়ার করা হয়েছে।

এতো কিছু ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে যেতে দেখে আমি শেষে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই, যে ব্লগিং আর করব না।  দশ বছর... অনেক সময় পেরিয়ে এসেছি, এখনো কমিক্স পড়তে এবং আপনাদের পড়াতে ইচ্ছে হয় অনেক। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে এই ইচ্ছে আমাদের ক্রমশ হারিয়ে পড়বে।

এবার, রয়ের বাড়ি ফেরার পালা(গত পোস্টে অসমাপ্ত)। কথা দিয়েছিলাম রয়ের জন্য এটুকু করবো।

প্রচ্ছদ রূপান্তর- দেবাশীষ কর্মকার 


পড়ুন রয়ের বাড়ি ফেরা(অনুবাদ: পার্থ অরণ্যদেব ও দেবাশীষ কর্মকার)