Friday, June 18, 2021

শেষ পোস্ট

 প্রিয় বন্ধুরা, পৃথিবীতে সব কিছুরই যেমন শুরু আছে তেমনি তার শেষও আছে. আমি ব্লগ শুরু করেছিলাম 2009, 2019-20 অবধি মোটামুটি পোস্ট করেছি. পোস্ট সংখ্যা বেশি না হলেও(85-86টি) আমার ব্লগে দর্শক/পাঠক মূলত আসতেন rare কমিক্স স্ট্রিপগুলোর জন্য, যেগুলো বই আকারে প্রকাশিত হয়নি. এই 10 বছরে অনেক পাঠককে কমিক্স বিনামূল্যে পড়তে দিয়েছি, ভাগ করে নিয়েছি নিজের ভালোবাসা.

অনেক ভালোবাসা, স্মৃতি, অনেক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয়.. এবং আমার আজ যে টুকু পরিচিতি তার জন্য বেশ কিছুটা আমার এই ব্লগ দায়ী.

আগেও কয়েকবার ব্লগিং বন্ধ করে দেব ভেবেছি, বারবার আপনাদের ভালোবাসা, বন্ধুদের উৎসাহে ফিরে এসেছি কখনো না কখনো. কিন্তু এবার আর ফিরব না.

কমিক্স থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ সরিয়ে রাখতে পারবো না জানি, তাই অন্য একটি ব্লগে আমার সংগ্রহের কিছু পত্রিকা দেব. আপনারা সেখান থেকে পড়বেন.

ব্লগটি খোলা রইল যাতে সবাই পড়তে পারেন. কিন্তু এই ব্লগে কোথাও আর কমিক্স পাবেন না.

ভালো থাকবেন সবাই. ধন্যবাদ. জানি আপনারা কমেন্ট করে ফিরতে বলবেন, কিন্তু আর নয়.. 

Tuesday, March 31, 2020

Tex Benson from Anandamela

সব জিনিসেরই যেমন কিছু ভালো দিক কিছু খারাপ দিক থাকে, ঠিক তেমনি বর্তমানে করোনা ভাইরাসকে রুখে দেওয়ার জন্য "লকডাউন" পরিস্থিতির কিছু ভালো দিক আছে।  আর তার মধ্যে অন্যতম হল আমি আপনাদের জন্য কিছু কমিক্স দিতে পারবো আশা রাখি।  আর আপনারাও উপভোগ করবেন।

মন থেকে সায় না দিলেও গতবারের পোস্টের পর ব্লগ প্রাইভেট/বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবং তা অনেকটা পাকাপাকি ভাবেই।  বন্ধুরা, জানিয়ে রাখি আমি চাইলেও হয়তো পারবো না... কারণ আমার এই ব্লগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে ১২-১৪ জন পাঠক বন্ধু আমাকে mail করেছিলেন। এনারা অনুরোধ করেছিলেন আমাকে যাতে যেন ব্লগ বন্ধ না করি(অবশ্য ১-২জন আমাকে ভুল করে "ইন্দ্রনাথ"দা ভেবেছিলেন) এবং প্রাইভেট থাকলে কি ভাবে তারা দেখতে পাবেন এই ব্লগটি। আমি তাদেরকে তিনটি প্রশ্ন করেছিলাম:
১. আপনি কবে থেকে আমার ব্লগ পোস্ট ফলো করছেন? 
২.  আমি ব্লগে যে কটি  কমিক্স দিয়েছি এখনো অবধি তার মধ্যে কোনটি আপনার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেন? 
৩. আমি যদি ব্লগিং করা বন্ধ করে দিই, তাতে আপাত দৃষ্টিতে কি  ক্ষতি হবে আপনার মনে হয়? অনেক ব্লগাররাই তো  বন্ধ করে দিয়েছেন৷ তার পর অন্য ব্লগার এসে আপনাদের জন্য কমিক্স দিয়েছেন৷ তাহলে আমি বন্ধ করে দিলে অসুবিধেটা কোথায়? 

আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে  করি, কারণ এনারা সবাই আমাকে এই প্রশ্নগুলির উত্তর মেলে পাঠিয়েছিলেন! আর ইন্দ্রনাথ দা'র একটা কথা সবসময় আমার মনে থাকবে..." স্বাগত, কিছু লোক এরকম থাকবেই।  ২-৪ জন লোকের জন্য হাজার হাজার পাঠককে বঞ্চিত করো না।" নীলদাও  আমাকে বলেছিলেন গত পোস্টে, যে এরকম লোক থাকবেই। মানিয়ে নিয়ে চলতে পারলে ভালো।

অতএব, বন্ধুরা... মূলত আপনাদের কারণেই আবার "অবসর ভেঙে" ফিরে আসা! আজ থেকে ব্লগ আবার সবার জন্য খোলা... 

আজ, নীলদার দৌলতে "টেক্স বেনসন" কমিক্সের প্রথম গল্পটি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। সম্ভবত আনন্দমেলাতে টেক্স বেনসন এর ৪টি কমিক্স প্রকাশিত হয়। তবে ঠিক কোন গল্পগুলির অনুবাদ সেটা এখনও বুঝতে পারিনি। একটা অদ্ভুত ব্যাপার, এই টেক্স বেনসন এর কমিক্স চরিত্রগুলির সঙ্গে ফ্ল্যাশ গর্ডন এর চরিত্রগুলির আশ্চর্যরকম মিল আছে। 



পড়ুন টেক্স বেনসন: ১ম গল্প                

(আনন্দমেলা ২৯শে এপ্রিল ১৯৮৭- ১৯ অগাস্ট ১৯৮৭)


KINDLY MENTION NILDA'S NAME/MY NAME BEFORE SHARING.(SCANS BY NILDA & PHOTOSHOP BY MYSELF)

পরবর্তী পোস্ট: অন্যান্য প্রাক্তন ব্লগাররা  এবং  কিছু অসমাপ্ত কাজ! 

Wednesday, December 25, 2019

শুভ বড়দিন; রয়ের বাড়ি ফেরা

বন্ধুরা, আমি দশ বছর ব্লগিং করে আসছি এ কথা সকলেই জানেন। প্রথমদিকে আমি এবং অন্যান্য সব ব্লগাররা শুধুমাত্র ব্লগেই পোস্ট করতাম। দর্শকরা নিয়মিত ব্লগে এসে ঘুরে যেতেন। এখন সময়, মাধ্যম, এবং সর্বোপরি আমি নিজে- সবটাই অনেক পাল্টে গেছে। তাই এখন ব্লগ থাক বা না থাক, সবাই এখন "ফেসবুক"-এ অনেক বেশি সময় কাটান(অন্য মাধ্যমের চেয়ে), এবং তারা মূলত কমিক্সের ডাউনলোড লিংক নামাতেই ব্যস্ত থাকেন। মন্তব্য ব্লগে পাওয়া যায় না(সেটা নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও সেটাই বাস্তব আমি জানি) বা পেলেও সাধারণত তা কম। আবার কিছু বিশেষ পোস্টে ২০-২২ বা ৩০-৪০টি মন্তব্যও পাওয়া গেছে। বর্তমানে বাংলা কমিক্সের সবচেয়ে পুরোনো সক্রিয় ব্লগারদের মধ্যে আমার পরেই আছে ইন্দ্রনাথদা(৫ বছর হয়ে গেলো!,যদিও ইন্দ্রদা আমার চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় )

এই দশ বছরে শুধু ব্লগ কেন, কমিক্সের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত রকম কাজ(ডিজিটাইজেশন বা ডকুমেন্টেশন বা অনুবাদ) থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবো ভেবেছি। এবং তা শুধু একবার নয়, বহুবার। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক আছে, সব বলে বা লিখে বোঝাতে পারবো না।

আমি এবং আমার যে সকল বন্ধুরা, যারা নিঃস্বার্থে, শুধুমাত্র পাগলের মতন কমিক্স ভালোবাসি(অবশ্য আমাদের চেয়েও বেশি পাগল আছেন), আমরা সবাই একসূত্রে বাঁধা... সেটি হল শুধু পড়তে নয়, আমরা আপনাদের কমিক্স পড়াতে ভালোবাসি। পুরোনো কমিক্স সংরক্ষণের পাশাপাশি সেটিকে স্ক্যান করে বিনামূল্যে পড়তে দিই। এছাড়া আমার কিছু বন্ধু যেমন চিত্রচোর, পার্থ অরণ্যদেব, এবং(ebongcomics দেবাশীষ),ইন্দ্রনীলদা অনেক সময় খরচ করে শুধুমাত্র আমার/আপনাদের মতন পাঠকের জন্য বিনামূল্যে বিদেশী কমিক্স অনুবাদ করে যাচ্ছে নিয়মিত। এতো পরিশ্রমের বদলে আমরা কি একটু সামান্য মন্তব্যও আশা করতে পারি না? আমি বলছি না আপনারা শুধু "ভালো" বা ধন্যবাদ এগুলোই লিখুন... অনুবাদ ভালো বা খারাপ যাই লাগুক সেগুলো যদি জানান তাতে নতুন ব্লগাররা উৎসাহ পাবে।

অনেক ব্লগারদের ব্লগিং ছেড়ে দেওয়ার একটি অন্যতম কারণ, তারা কিছু সময় পরে এটি ভাবতে বাধ্য হন... "এসব করে কি হবে"? হ্যা, এটি শুধুমাত্র তাদের পরিবারের লোকেদের কথা নয়, তাদের নিজের কথাও। ঘরের খেয়ে বোনের মোষ তাড়িয়ে কি লাভ? এক্ষেত্রে আমি এবং আমার সেইসব বন্ধুরা ব্যতিক্রমী, আমরা বনের মোষকে তাড়াতেই ভালোবাসি! আমাদের সংখ্যা খুবই কম! তাও তাড়া করি।

কিন্তু বর্তমানে আমি এবং আমার সব বন্ধুদের একটি ভূতে তাড়া করেছে। আর সেটি হল শেয়ারিং এর ভূত! হ্যা, আমাদের কমিক্স যে কেউ শেয়ার করতে পারেন, এবং বিশেষ করে বর্তমান যুগে ফেসবুক বা হোয়াটস্যাপের মাধ্যমে তা কয়েক সেকেন্ডে অসংখ্য লোকের কাছে পৌঁছে যায়। আমাদের কারোর তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু খারাপ লাগে যখন আমাদের স্ক্যান বা অনুবাদ কোনো পাঠক কোনোরকম কৃতজ্ঞতা না জানিয়েই সেটি বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করেন। কোথায় তারা সেটি পেলেন তা বলার প্রয়োজনবোধটুকুও করেন না অনেকেই। আবার কেউ কেউ না জেনেও শেয়ার করেন। তাই তিনি যদি সত্যি না জানেন, তাহলে অন্ততপক্ষে মূল আপলোডারকে ক্রেডিট দেওয়া উচিত।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কিছু গ্ৰুপে নতুন কমিক্স যেগুলি খুবই কম দামে পাওয়া যায়, সেগুলিও কেউ কেউ আপলোড করে দিয়ে দিচ্ছেন। এর ফলে প্রকাশক এবং শিল্পী উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন যুগ পাল্টেছে, অনেকে হাতে পড়ার চাইতে পিডিএফ চান। বা হাতে নিয়ে পড়া সম্ভব নয়, কারণ তিনি বাইরে থাকেন। আবার কেউ বা খরচ করতে চান না।

এই কারণে প্রথম থেকে ইন্দ্রনাথদা তার ব্লগে জলছাপ ব্যবহার করে আসছে। আমিও শুরুর দিকে করতাম। কিন্তু বরাবর দেখেছি জলছাপ দিলে অনেক পাঠকই তা অপছন্দ করেন। তাই দেওয়া বন্ধ করে দিই। কিন্তু মাস দুয়েক আগে "অকবির পাঠশালা" নামক(ফেক নাম বোঝাই যায়) ইন্দ্রনাথদার  সমস্ত ফ্যান্টমগুলিকে আলাদা করে নিজস্ব ফাইল বানিয়ে সেগুলিকে "ফ্যান্টম- ১ম খন্ড" বলে ফেসবুক একটি গ্রুপে চালিয়ে বেশ প্রশংসা কুড়োচ্ছিলো। পাঠকরা ইন্দ্রনাথদার জলছাপ আছে দেখেও তাকেই সমস্ত রকম ক্রেডিট দিতে থাকে। একবারও কেউ জিগেস করলেন না যে ফাইলগুলি উনি কথা থেকে পেলেন? এরকম জলছাপ কেন? পাঠকদের এরূপ সুবিধেবাদী ব্যবহার দেখে আমার মতন প্রত্যেক ব্লগারের সত্যি সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল। শুধু অকবির নন, এরকম আরও অনেকে আছেন.. এদের মধ্যে কেউ কেউ না বুঝে শেয়ার করেছেন, আর আমার তো কোনো কমিক্সেই জলছাপ থাকে না। বরং আমি যদি বলি যে বহু বছর ধরে চলা রোভার্সের রয় এবং বিলির বুট দুটি কমিক্সই সম্পূর্ণ আমার আপলোড করা, লোকে উল্টে আমাকেই জিগেস করবেন কি প্রমাণ আছে? কিন্তু ইন্দ্রনাথদার তো আছে। অন্যান্য ব্লগ থেকেও এভাবে শেয়ার করা হয়েছে।

এতো কিছু ঘটনা দিনের পর দিন ঘটে যেতে দেখে আমি শেষে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই, যে ব্লগিং আর করব না।  দশ বছর... অনেক সময় পেরিয়ে এসেছি, এখনো কমিক্স পড়তে এবং আপনাদের পড়াতে ইচ্ছে হয় অনেক। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে এই ইচ্ছে আমাদের ক্রমশ হারিয়ে পড়বে।

এবার, রয়ের বাড়ি ফেরার পালা(গত পোস্টে অসমাপ্ত)। কথা দিয়েছিলাম রয়ের জন্য এটুকু করবো।

প্রচ্ছদ রূপান্তর- দেবাশীষ কর্মকার 


পড়ুন রয়ের বাড়ি ফেরা(অনুবাদ: পার্থ অরণ্যদেব ও দেবাশীষ কর্মকার) 

Sunday, August 4, 2019

আনন্দমেলার শেষ রোভার্সের রয়(১৯৯২-৯৩)

দর্শকবন্ধুরা, মাস দুয়েক পরে পোস্ট করার জন্য দুঃখিত। নানারকম কাজের মধ্যে থাকার জন্য পোস্ট করতে পারিনি। চার বছর আগে রোভার্সের রয় প্রথমবার ব্লগে দিয়েছিলাম আপনাদের জন্য। আর আজ দেব.. সম্ভবত শেষ বারের জন্য।

জুন ১৯৭৯'র(আষাঢ় ১৩৮৬) পরের আনন্দমেলা  ১৮ই জুলাই ১৯৭৯(প্রথম ছোটো আনন্দমেলা) থেকে রোভার্স শুরু হয়। শেষ প্রকাশিত হয় ৩১.০৩.১৯৯৩(বিশেষ অটোগ্রাফ সংখ্যা; তথ্য- সাগ্নিক ঘোষ)





আনন্দমেলার পাতায় প্রথম এবং শেষ "রোভার্সের রয়"


বুঝতেই পারছেন, রয়ের আবির্ভাব আনন্দমেলার পাতায় হঠাৎ করেই ঘটেছিল। কে এই রয়? গল্পের শুরুর কোনো ঠিক ছিল না.. একইভাবে রয় যখন শেষ বারের জন্য বেরোয় তখনও অসমাপ্ত। 

রয়কে প্রথম দেখা যায় ব্রিটিশ পত্রিকা TIGER এ ১৯৫৪ সালে। আমরা আনন্দমেলাতে যে রয়কে দেখেছি তার সঙ্গে তখনকার রয়ের কোনোরকম মিল নেই, কারণ সে তখন কিশোর। এইভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রয়ের আকৃতি ও চেহারা উভয়েই পাল্টেছে, পাল্টেছে লেখক-শিল্পীরাও। অবশ্যই তার সঙ্গে রয়ের দলেও পরিবর্তন ঘটেছে বেশ কয়েকবার।


রোভার্সের রয়ের প্রথম পাতা... রয়ের পরের দিকের এক সঙ্গীকেও দেখা যাচ্ছে... 'বুড়ো' বলে খ্যাত..কে বলুন তো?
সময়ের সঙ্গে রয়ের পরিবর্তন 

১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে TIGER পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয় Scorcher নামক আর এক ব্রিটিশ পত্রিকা। পরে ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ROY OF THE ROVERS এর আলাদা করে কমিক ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতে থাকে। সেখানে রোভার্সের রয় বাদ দিয়ে আরও বিভিন্ন ফুটবল কেন্দ্রিক কমিক্স প্রকাশিত হত(রয়ের প্রথম পোস্ট দ্রষ্টব্য )। আনন্দমেলাতে আমরা যে রয়কে দেখে আসছি, তার সঙ্গে অনেকটা মিল আছে ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারীর TIGER & Scorcher এ প্রকাশিত রয়ের। গল্পের শুরুটা এরকম:

রয় তখন মেলচেস্টার রোভার্সের অধিনায়ক। FA CUP থেকে বিদায় নেওয়ার পর হঠাৎ তাদের তৎকালীন ম্যানেজার "টনি" গায়েব হয়ে পরে। আর স্যাম বার্লো রয়কে প্রস্তাব দেয় খেলোয়াড়-ম্যানেজার হওয়ার। সেই স্যাম বার্লো, যে রয়কে ইংল্যান্ড টীমেরও খেলোয়াড়-ম্যানেজার হতে বলেছিল, যার সঙ্গে রয়ের বর্তমানে সংঘাত চরমে।




এরপর রয় প্রথম যেদিন খেলোয়াড়-ম্যানেজার হিসেবে প্রবেশ করল, সেদিন পুরোনো বন্ধুরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে লাগল। পুরোনো বন্ধুদের মধ্যে তখন ছিল ব্ল্যাকি, গাইলস, প্রমুখ।















এর পর আরও বেশ কিছু ঘটনা আছে...সব আমার পড়া নয়।  তবে একটি উল্লেখযোগ্য বিশেষ পর্ব হল "রয় ও পেনির বিয়ে"। এসবের কোনো কিছুই আনন্দমেলাতে নেই।  আনন্দমেলাতে রয়ের প্রকাশিত প্রথম পাতা আসলে রয়ের ১৯৭৭ সালের একটি সংখ্যা থেকে নেওয়া।

এবারে রয়ের শেষের অংশটি দেখে নেওয়া যাক। রয়ের শেষ পৃষ্ঠা দুটির জন্য নীলদাকে ধন্যবাদ।
শেষ পৃষ্ঠায় দেখা যাচ্ছে রয় পেনাল্টি নিতে যাচ্ছে তার পুরোনো দল মেলচেস্টারের বিরুদ্ধে...কিন্তু তারপর কি হল? এই প্রশ্নের উত্তর আনন্দমেলার পাঠকরা কোনোদিন পাননি। আরও অদ্ভুত ব্যাপার... শেষ পাতায় নিচের দিকে জায়গা থাকলেও সেখানে কোনো কিছু লেখা নেই...মানে প্রতি সংখ্যায় যেমন লেখা থাকে "এরপর আগামী সংখ্যায়" বা এরকম কিছু... কিছুই লেখা নেই। এর কি কারণ? এটা কি নেহাতই "Printing mistake"? নাকি আনন্দমেলা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করেই এখানে কিছু লিখতে নিষেধ করেছিলেন?
এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কোনোদিনই পাওয়া যাবে না...তবে আমার মনে হয় দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটাই সঠিক। এর তিনটে কারণ:
(১) রয়ের জনপ্রিয়তায় একটু ভাঁটা পরা... আমরা যারা ৯০' এর দশকে জন্মেছি, তারা তখন ওই সুপারহিরোদের দিকে বেশি আকৃষ্ট হতাম। তখন আনন্দমেলাতে ব্যাটম্যান বেরোচ্ছে পাশাপাশি, তার আগে অল্প দু-চারটে স্পাইডারম্যানের পাতা দেখেছি। আছে টিনটিন আর টারজান... এসবের পাশে রয় তখন অতোটা ভালো লাগতো না। পরবর্তীকালে পুরোনো আনন্দমেলা আবার যখন জমাতে আরম্ভ করি, তখন রয় লেগেছিল দুর্ধর্ষ।

(২) রয় একটি অত্যন্ত দীর্ঘ কমিক্স। বিদেশে চলেছে ১৯৫৪-১৯৯৩ অবধি, এদিকে 
বাংলাতে প্রায় ১৪ বছর। পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাতে কি? টিনটিন আর টারজান তো চলেছে আরও বেশি(২০ বছর আর ১৭-১৮ বছর).. গাবলুও তাই। তাহলে রয় কেন চললো না? এর কারণ টিনটিন, টারজান বা গাবলু... এই সব কমিক্সের আলাদা আলাদা গল্প আছে।  কিন্তু রয়ের সেইভাবে আলাদা গল্প নেই।  প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে, ঠিক যেমন বিলির বুট। বলা যেতে পারে, রয়ের এক একটি "Seasonal গল্প" হত। এই Season গুলিও ছিল একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত।

(৩) এটি আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ধারণা... রয়ের "THE GREAT MELCHESTER MASSACRE" episode. এটি ১৯৮৬ সালের একটি পর্ব, যেখানে মেলচেস্টার রোভার্স খেলতে যায় "বসরানে"। ফেরার পথে তাদের টিম-বাসে নাশকতা করা হয়।  দুর্ঘটনায় রোভার্সের সবাই মারা যায়, খালি কোনোমতে বেঁচে যায় রয় ও ডানকান ম্যাকে।


আমি পাঠকবন্ধুদের একটি প্রশ্ন করতে চাই... আপনি একটি দল ও তার খেলোয়াড়দের অত্যধিক ভালোবাসেন। হঠাৎ যদি শোনা যায়, একটি দুর্ঘটনায় সেই দলের অধিকাংশ প্লেয়ার মারা গেছেন, তাহলে তখন আপনার কেমন লাগবে?

আর তাই যদি হয়, তাহলে ভাবুন তো.. যে রয় একদম শুরু থেকে এক একটি প্লেয়ার খুঁজে তিল তিল করে এই অপ্রতিদ্বন্দী মেলচেস্টার রোভার্স গড়ে তুলেছিল, তার কেমন লাগবে?

এই পর্বের অন্য আরও কিছু ছবি আমার কাছে আছে, কিন্তু বিশ্বাস করুন বন্ধুরা... সেই দৃশ্যগুলি আমার মোটেই ভালো লাগেনি। তাই আপনাদের সেগুলি আপাতত দেখাবো না। মনে হয়, আনন্দমেলা কর্তৃপক্ষ সেগুলি দেখে বুঝতে পেরেছিলেন... বাঙালি পাঠক আর যাই হোক, এই দৃশ্য সম্ভবত সহ্য করতে পারবে না বা মেনে নিতে পারবে না। তাই তিনি "রোভার্সের রয়" বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তবে রয় তার নিজের দলের বিরুদ্ধে গোল করল কিনা, বা রয় মেলচেস্টারে ফিরল কিনা... ফিরলে কিভাবেই বা ফিরল? আমার মনে হয় এই অংশটুকু দিয়ে অন্তত আনন্দমেলার শেষ করা উচিত ছিল। এরপর আবার নতুন Season শুরু।

পোস্টে শুরুর দিকে আমি উল্লেখ করেছি আনন্দমেলায় যে রয় দিয়ে শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে, সেটি আসলে ১৯৭৭ এর রয়। তাহলে ১৯৮৬'র এই পর্বটি হিসেব মতন থাকার কথা আনন্দমেলার ১৯৮৮ সালে। তাহলে নেই কেন? এখানে এইভাবে দেখলে হবে না বন্ধুরা... কারণ আসল রয় বেরোত প্রতি সপ্তাহে একদিন...আর আনন্দমেলা তখন ছিল পাক্ষিক(দু-সপ্তাহে একটি)। আসল রয় সেই হিসেবে বছরে বেরোতো গড়ে ৫০টা।  আর আনন্দমেলা বছরে ২৪-২৫টা। ১৯৯৩ এর যে আনন্দমেলায় রয় শেষ বেরোয়, সেটি আসলে অরিজিনাল ম্যাগাজিনে বেরিয়েছিল ১৯৮৩-৮৪ সালে। 

অর্থাৎ অন্ততপক্ষে রয়ের প্রথমের দিকের দু-আড়াই বছর এবং শেষের প্রায় ১০ বছর(হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রয় আহত না হওয়া পর্যন্ত) আনন্দমেলাতে নেই। এতগুলি বছরের রয় কোনোদিন অনুবাদ হবে কিনা জানিনা, খুব ধৈর্য্য এবং সময়ের ব্যাপার... পাঠকরা শেষের অংশ দেখতে চাইবেন না আশা করি... আর দেখলে কারোর নিশ্চয় ভালো লাগবে না। শুরুর দিকের গুলো অনুবাদ করা যেতে পারে, তবে বেশ কিছু দর্শক চাইলেই সেটি করা হবে, তার আগে নয়।
পড়ুন
আনন্দমেলার শেষ রোভার্সের রয়(১৯৯২-৯৩; New link)

শেষে শুধু এইটাই বলতে চাই রয় এবং তার সৃষ্টিকর্তাদের... "হও তুমি ব্রিটিশ, কিন্তু বাঙালি তোমাকে কোনোদিন ভুলবে না রয়।  কোনোদিন ভুলতে পারবে না। "

বিঃ দ্রঃ পোস্টের ডাউনলোড লিংকটি পাল্টাতে বাধ্য হলাম বন্ধুরা। রয়ের একান্ত পাঠক শান্তনু টোকদার দাদা আমার একটি বড় ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন। আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ। যে শেষ ৫ পাতা পার্থ অনুবাদ করেছিল, অর্থাৎ আনন্দমেলার পরের অংশটি, সেখানে আরও বেশ কিছু পাতা রয়েছে যে গুলি আমি জানতাম না।  ভুলটা আমারই, কারণ আমি অরিজিনাল ফাইল ডাউনলোড না করে একটি ওয়েবসাইট থেকে ওই ৫টি পাতা সংগ্রহ করেছিলাম। এর জন্য দুঃখিত।  কথা দিচ্ছি, পরের পোস্টে আমি ওই অংশটি সম্পূর্ণ করবো।
তাই রয় আপাতত এখানে শেষ হচ্ছে না। লিংকে শুধুমাত্র আনন্দমেলার অংশটুকুই রাখলাম।